শেষ পাঁচ বলে ২৯ রান দরকার ছিল। ম্যাচ জিততে পাঁচটি ছক্কার প্রয়োজন ছিল, এক কথায় তা অসম্ভব! কিন্তু শাহরুখের ‘নাইট’ রিঙ্কু সিং এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন। এদিন নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে রিঙ্কুর ঝড় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটানসের বিজয় রথ থামিয়ে দিল। ‘লর্ড’ রিঙ্কু সিং-এর ঝোড়ো ব্যাটিং-এ ভর করেই কেকেআর তিন উইকেটে জয় পেল। রিঙ্কু সিং চরম আর্থিক প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে এখন প্রত্যেক কেকেআর ভক্তদের নয়নের মণি তিনি। তাহলে কী করে কেকেআরের মালিকই বা বাদ যান?
কেকেআর ম্যাচ জেতার পরই শাহরুখ খান টুইট করেছেন। রিঙ্কু সিং-কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। এই দিন নিজের পরিবর্তে পাঠান ছবির পোস্টারে শাহরুখ রিঙ্কুর মুখ বসান। সাথে লিখেছেন, ‘ঝুমে জো রিঙ্কু….মাই বেবি রিঙ্কু, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতিশ রানা ফাটিয়ে দিয়েছো তোমরা! শুধু বিশ্বাস রেখো নিজের উপর, ওটাই যথেষ্ট। কলকাতা নাইট রাইডার্স অনেক অভিনন্দন’। একই সাথে তিনি বার্তা দিয়েছেন দলের সিইও ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে, ‘নিজের হার্টের খেয়াল রাখুন, স্যার’।
রিঙ্কুর এই ইনিংস দেখে সকল ক্রিকেটপ্রেমীদের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গিয়েছিল। রবিবার আমদাবাদে গুজরাট প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ২০৪ রান তুলেছিল ৪ উইকেট হারিয়ে। রান তাড়া করতে নেমে কেকেআরের শুরুটা ভালো না হলেও ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং অধিনায়ক নীতিশ রানা কেকেআরকে লড়াইয়ে ফেরান। কিন্তু কেকেআর ম্যাচ হারতে বসেছিল রশিদ খানের হ্যাটট্রিকে। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন এবং শার্দুল ঠাকুর পরপর তিন বলে আউট হয় প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। কেকেআর ভক্তরা ম্যাচ জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে ওস্তাদ রিঙ্কুর মার এল!
এদিন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। লখনউ সুপার জায়েন্টসের বিরুদ্ধে গতবার রিঙ্কু কেকেআরকে এইরকম একটি অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিতে দিতেও ব্যর্থ হন। তবে কোনরকম ভুল চুক আজ হলো না। শেষ পর্যন্ত ২১ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ছয়টি ছক্কা এবং একটি চার মেরেছিলেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ২২৮.৫৭।
রিঙ্কুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। রিঙ্কুর সংসার ছিল লখনউয়ে দু’টি ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে। ঠিকমতো দুবেলা খাবার জুটত না। একটা সময় রিঙ্কুকে ঝাড়ুদারের কাজ পর্যন্ত করতে হয়েছে। কেকেআরের সদস্য হয়েছেন সেখান থেকে লড়াই করে, এরপর রিসার্ভ বেঞ্চে বসে বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে। কিন্তু সুযোগ হাতে আসার পর রিঙ্কু তার সদ্বব্যবহার করতে ভোলেননি।
এদিন ম্যাচ জয়ের পর তিনি জানিয়েছেন, ‘নিজের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল যে এটা আমি করতে পারব। কারণ লখনউয়ের (লখনউ সুপার জায়েন্টস) বিরুদ্ধে গত বছর এইরকম একটি ইনিংস খেলেছিলাম। ওই ম্যাচেও আস্থা রেখেছিলাম নিজের উপর। এই ম্যাচেও রেখেছি। রানা ভাই (নীতীশ রানা) বলেছিল যে ভরসা রাখ নিজের উপর। শেষ পর্যন্ত খেলবি। তারপর দেখা যাবে কী হবে।’