খারাপ ফর্মের জন্য নাকি দায়ী ভারতীয় বোর্ড ! KL রাহুলের বিস্ফোরক দাবী ঘিরে শোরগোল ক্রিকেট মহলে !!

চোটের কারণে রোহিত শর্মা খেলতে না পারায় টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কে এল রাহুল অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ভারত চট্টগ্রাম এবং ঢাকাতে দুটি টেস্টেই জিতেছে। সিরিজ জিতলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে রাহুলের ভাগ্য বিশেষ সুপ্রসন্ন হয়নি। ঋষভ পন্থ, চেতেশ্বর পূজারা, শ্রেয়স আইয়ারের মত ব্যাটাররা রান পেলেও রাহুলের ঝুলি প্রায় খালি রয়ে গিয়েছে। তিনি ওপেনার হিসেবে দুটি টেস্টে আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে চারটি ইনিংস মিলে মাত্র ৫৫ রান এসেছে। দলের প্রয়োজনের সময় ত্রাতা হওয়ার বদলে ভারতকে সমস্যায় ফেলেছেন আউট হয়ে তিনি। নানা মহল থেকে বলা হয়েছে ভারত ভুল করেছে রাহুলকে বয়ে বেরিয়ে। তাকে অবিলম্বে বসিয়ে জায়গা দেওয়া হোক পৃথ্বী শ বা ঈশান কিষাণদের মতো তরুণদের। এবার সরাসরি কর্নাটকের ওপেনার নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিলেন। রান করার জন্য ভারতের ক্রিকেট বোর্ড অর্থাৎ বিসিসিআই-কে ঘুরিয়ে দায়ী করলেন। ইতিমধ্যেই ক্রিকেট মহলে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে সাড়া পড়েছে।

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে কান্নুর লোকেশ রাহুলের ভারতের টেস্ট দলে অভিষেক হয়। অজি বোলিং এর সামনে প্রথম টেস্টে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি শতরান করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ফর্মের গ্রাফ বারবার ওঠা নামা করেছে। গত কয়েক বছরে তিনি দলের বাইরে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার ফর্ম হারিয়ে। কারোর মনে রাহুলের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ না থাকলেও ২২ গজে সেই প্রতিভার সম্পূর্ণ প্রতিফলন সবসময় দেখা যায় না। বর্তমানে টেস্ট, একদিবসীয় ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি ৩ ফরম্যাটেই ভারতীয় দলের তিনি অটোমেটিক চয়েজ। কিন্তু রাহুল যা ফর্মের বহর দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে, কতদিন ‘অটোমেটিক’ তকমাটি টেকে তা নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধারা সন্দিহান। রাহুল ৪৫ টি টেস্টের ৭৮ ইনিংসে মোট ২৬০৪ রান করেছেন। সাতটি শতরান আছে। ৪৮ টি একদিনের ম্যাচে রাহুল ৫ টি সেঞ্চুরি সহ ১৭৬০ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও তিনি ২২৬৫ রান করেছেন ৭২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিলে। আইপিএলে রাহুলের ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যান। ৪ শতরানসহ ৪৮.০১ ব্যাটিং গড়ে তিনি ৩৮৮৯ রান করেছেন।

ধারাবাহিকভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে কর্নাটকের ওপেনারকে ব্যাটিং ব্যর্থতা গ্রাস করেছে। যেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে অন্যান্য দলগুলি পাওয়ারপ্লে’কে কাজে লাগিয়ে মন দিয়ে দ্রুত রান তুলে নিচ্ছিলেন, সেখানে ভারতকে বারবার সমস্যায় ফেলেছে ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা। তার ব্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে রান আসেনি। দ্রুত উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন পাকিস্তান, ইংল্যান্ড প্রভৃতি কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ সিরিজেও চিত্রনাট্য কিছু বদলায়নি। প্রথমে একদিনের ম্যাচে ৭০ বলে ৭৩ ছাড়া আর বলার মতো তার ব্যাটে একটিও রান নেই। তিন একদিনের ম্যাচ খেলে মোট ৯৬ রান করেছেন। এছাড়া টেস্টে চারটি ইনিংস মিলে ৫৫ রান এসেছে। ভারতীয় বোর্ড সূত্রে খবর আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রাহুলকে দলে রাখা হবে না। এমনকি তাকে পাকাপাকিভাবে কুড়ি-বিশের ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কতদিন রাহুলের ক্যারিয়ার বাকি দুই ফরম্যাটে দীর্ঘস্থায়ী হয় প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। সরাসরি বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে রাহুল এরই মধ্যে বিতর্ক বাড়ালেন। তিনি বললেন, “নিজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে প্রত্যেক ফরম্যাটে। একজন কত দ্রুত নতুন ফরম্যাটের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে অনেক সময় তার ওপর সাফল্য নির্ভর করে। আমার পারফরম্যান্স এই সিরিজে ভাল ছিল না। সেটা আমাকে মানতেই হবে। চেষ্টা করেছিলাম আমি, কিন্তু বড় রান করতে পারিনি। এখন সামনে তাকাতে চাইছি, যাতে ভালো করতে পারি ভবিষ্যতে।”

রীতিমতো ভারতের ক্রিকেট সূচী ঠাসা। বাংলাদেশ সফরের পরেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ রয়েছে। নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া তারপরেই। ক্রিকেটাররা এত পরিমাণে ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্লান্তিতে ভুগছেন বারবার। কাগিসো রাবাডা,বেন স্টোকস,ক্যুইন্টন ডি ককের মতো তারকারা ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে বাইরের দেশে গিয়ে মুখর হয়েছেন। অনেকেই বেছে বেছে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রিকেট খেলার। ক্লান্তির সমস্যা কাটাতে ভারতীয় বোর্ড ‘বিশ্রাম নীতি’ চালু করেছে। তা সত্ত্বেও অফ ফর্মের জন্য কে এল রাহুল অতিরিক্ত ক্রিকেটকেই দায়ী করছেন। বিসিসিআইয়ের ঘাড়েই দায় চাপাচ্ছেন। ভারতের অস্থায়ী অধিনায়ক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জানিয়েছেন, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেক ক্রিকেটারের কাছে আমাদের ক্রীড়া সূচি খুবই চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশেষ করে তিন ফরম্যাটেই যারা খেলে, আর অভ্যস্ত হয়ে যায় দ্রুত ফরম্যাটের সাথে। কিন্তু আমাদের কাছে এটাই চ্যালেঞ্জ (দ্রুত অন্য ফরম্যাটের সাথে মানিয়ে নেওয়া)। লাল বল আর সাদা বলের ক্রিকেটের মধ্যে কিছুটা বিরতি থাকলে ভালই হতো। আমরা আরেকটু বেশি সময় পেতাম লাল বলের ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নিতে। তাহলে আরো বড় রান করতে পারতাম একটু ধৈর্য নিয়ে খেলে।”