১৩ জুন, শুক্রবার – মৃত্যু আর অশান্তির মধ্যেও লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে চলল ক্রিকেটের মহাযুদ্ধ। বিমান দুর্ঘটনা ও ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে মানবিক শোকগ্রস্ত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট যেন জীবনের চলমানতার প্রতীক হয়ে দাঁড়াল। টেস্টের তৃতীয় দিনে টার্গেট ২৮২ রানে পৌঁছতে মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ব্যাট করলেন মার্করাম (Aiden Markram) ও বাভুমা। দু’জনের ১৪৩ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আরও একধাপ কাছে নিয়ে এল।
মৃত্যুর ছায়ায় ক্রিকেট: ১৩ জুনের প্রেক্ষাপট
একদিকে আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানি, অন্যদিকে ইজরায়েলের হঠাৎ ইরানে সামরিক হামলা – বিশ্বের অসংখ্য মানুষের মনে শঙ্কা আর আতঙ্ক। এমন দিনে, শুক্রবার ১৩ তারিখে, জীবনের স্বাভাবিক গতির ধারাকে অবিশ্বাস্যভাবে তুলে ধরল ক্রিকেট। লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে চলা দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল যেন ‘জীবন থেমে থাকে না’ – এই বাক্যকেই বাস্তব রূপ দিল।
লর্ডসে রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল: খেলার আবহ
গত দুইদিনের তুলনায় আবহাওয়া ছিল নিখুঁত। আকাশের ‘ফ্রোজেন ইয়োগার্ট’ রঙ হারিয়ে গিয়ে এল পরিষ্কার নীল আকাশ আর টুকরো টুকরো সাদা মেঘ। সকাল ছিল ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত। অস্ট্রেলিয়া তখন ২১৮ রানের লিড নিয়ে ৮ উইকেট হারানো অবস্থায় মাঠে নামে।
মাঠে তখন এক অনন্য মুহূর্ত তৈরি করে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডার রায়ান রিকেলটন। বাউন্ডারির দিকে বল ধাওয়া করতে গিয়ে পড়ে যায় তাঁর টুপি। বল পৌঁছে যায় রোপের গায়ে। তারপর নিজের বুটে ঠেলে টুপিটা উপরে তুলে ঝটপট ধরে ফেলেন রিকেলটন – যেন বুঝিয়ে দিলেন, লড়াই এখনও বাকি।
অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডারের প্রতিরোধ
দিনের ১৬তম বলে নাথান লায়ন এলবিডব্লিউ হন কাগিসো রাবাদার বলে – যা তাঁকে ম্যাচে ৯ উইকেট এনে দেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট জুটি – মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড – সময় ও রান দুটোই যোগ করলেন। ১৩৫ বল খেলে ৫৯ রান যোগ করেন তাঁরা, যার মধ্যে স্টার্কের একার রান ছিল ৫৩।
অবশেষে এডেন মার্করামের (Aiden Markram) বলে হ্যাজলউড ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ২৮২ রানের টার্গেট দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে।
অবশ্যই দেখবেন: ফের সুযোগ পেয়েও টিকতে পারলেন না করুণ নায়ার! কাড়াকাড়ি করে জায়গা নিলেন এই তরুণ
ইতিহাসের আলোকেই কঠিন টার্গেট
লর্ডস টেস্টে এত রান চেজ করে জেতার নজির রয়েছে মাত্র একবার – ১৯৮৪ সালে গর্ডন গ্রিনিজের ২১৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৪২ রান তাড়া করে জেতে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্কোয়াডে সেই স্তরের কিংবদন্তি নেই, তবে তারা সেই কঠিন স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছে।
স্টার্কের আগুনে শুরু, রিকেলটনের পতন
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা ছিল চাপে ভর্তি। ইনিংসের ১৩তম বলে রায়ান রিকেলটন অযথা ড্রাইভ করে স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন। এরপরে ক্রিজে আসেন ওইয়ান মুল্ডার, এক সময় যাঁর ব্যাটিং ছিল যেন নিস্তেজ ব্ল্যাক হোল – প্রথম ইনিংসে ৪৪ বলে মাত্র ৬ রান। এই ইনিংসে যদিও তিনি কিছুটা ভালো খেলছিলেন, কিন্তু হঠাৎই এক বলে টাইমিং মিস করে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। স্কোর তখন ৭০/২।
পুনরায় ইতিহাস খোঁজা: এক সময়কার যোদ্ধাদের স্মৃতি
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা পার্থে ৪০০ রান চেজ করে জিতেছিল। সেই দলে ছিলেন গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, জ্যাক ক্যালিস – যাঁরা ক্রিকেটের ইতিহাসে রূপকথা। এই দলে সেই ক্যালিবার নেই, তবে আছে মনোবল।
বাভুমার ইনজুরি আর অদম্যতা
এই সময় ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ টেম্বা বাভুমা। ১০৯ টেস্ট ইনিংসের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। আর সেটাই যেন ধাক্কা খায় – স্টার্কের বলে কড়া এজ যায় স্টিভ স্মিথের কাছে – তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্মিথের ছোট আঙুল ফেটে যায় এবং তিনি মাঠ ছাড়েন।
এরপর বাভুমা দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে নিজের বাঁ হ্যামস্ট্রিংয়ে টান খেয়ে যান। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে খেলায় ফিরলেও দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছিল।
মার্করামের মাটি কামড়ে লড়াই, শতরানের মাহাত্ম্য
এডেন মার্করাম ছিলেন পুরো ইনিংসে এক ধ্রুব তারকা। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস আর স্নায়ুতে টান না এনে তিনি খেলেছেন নিজের সেরা টেস্ট ইনিংসগুলোর একটি। যখনই বাভুমা রান নিতে পারছিলেন না, তখন তিনিই রান তুলে গেছেন।
অবশ্যই দেখবেন: টিম ইন্ডিয়ার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে চমক! আরসিবি’র এই উইকেটরক্ষক পেল আগরকরের বিশ্বাস
মার্করামের শতরান এল হ্যাজলউডের বলে মিডউইকেটে চার মেরে – সঙ্গে সঙ্গে তিনি হেলমেট খুলে, ব্যাট তুলেই চোখ মুছলেন – চোখে জল। এমন ইনিংস ক্রিকেটে বারবার দেখা যায় না।
প্রতিপক্ষ বিশ্বসেরা বোলিং অ্যাটাক
অস্ট্রেলিয়ার দলে রয়েছে বিশ্বের সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে তিনজন – প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড এবং নাথান লায়ন। সেই বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটিং প্রচেষ্টা সহজে বিস্মৃত হওয়ার নয়।
চতুর্থ ইনিংসে রেকর্ড গড়া পথে প্রোটিয়ারা
এই জুটি – বাভুমা (অর্ধশতরান) ও মার্করাম (শতরান) – এখন পর্যন্ত ১৪৩ রান তুলেছেন। শেষ দিন সকালে জিততে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার আর মাত্র ৬৯ রান। সামনে পাহাড়সম কামিন্স, লায়ন ও স্টার্ক। কিন্তু পেছনে শক্তিশালী ইতিহাস, এবং আজকের অনবদ্য ইনিংস।
যেখানে মৃত্যু ও যুদ্ধ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে, সেখানে ক্রিকেট জীবনের উৎসব হয়ে উঠে এসেছে। লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তাদের লড়াই যেন এক অনুপ্রেরণা – মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে জীবনের দিকে এগিয়ে চলা। শুক্রবার ১৩ তারিখ – অশুভ বললেও – হয়তো এই রাতটা বিশ্বের কিছু মানুষের কাছে জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর রাত।
অবশ্যই দেখবেন: অবশেষে অধিনায়ক রিয়ান পরাগ! বিদেশ সফরে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার বড় দায়িত্ব
⚽ ক্রীড়া বিভাগ | 🔗 লিংক |
---|---|
🏏 ক্রিকেট নিউজ | Cricket News |
🔥 আইপিএল ২০২৫ | IPL 2025 |
📸 ক্রিকেট ভাইরাল | Cricket Viral |
🗣️ ক্রিকেট গসিপ | Cricket Gossip |
🏆 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ | Champions Trophy 2025 |
⚽ ফুটবল নিউজ | Football News |
🎯 অন্যান্য খেলাধুলা | Other Sports |