ভারতীয় ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নতুন নয়, তবে কিছু প্রত্যাবর্তন আলাদা করে নজর কেড়ে নেয়। সদ্যসমাপ্ত সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফিতে ঠিক তেমনই এক দুরন্ত কামব্যাক করেছেন ঈশান কিষান (Ishan Kishan)। ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন, জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া, সমালোচনার চাপ—সবকিছুকে পিছনে ফেলে নিজের ব্যাট দিয়েই জবাব দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি উইকেটকিপার-ব্যাটার। কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন হাতেনাতে। অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাচক কমিটি তাঁকে রেখেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬-এর ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে।
সৈয়দ মুসতাক আলিতে ঈশান কিষানের আগুন ফর্ম
সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফি ২০২৫ ঈশান কিষানের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা অধ্যায় হয়ে থাকবে। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে তাঁর ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মবিশ্বাস আর ক্ষুধা। গড় ছিল ৫৭-এর বেশি, আর স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৯৭। মোট ৫১৭ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বাধিক রানসংগ্রাহকও হন তিনি। প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর কোনও রকম দয়া দেখাননি ঈশান।
ফাইনালে তাঁর ব্যাটিং যেন পুরো টুর্নামেন্টের সারাংশ। মাত্র ৪৯ বলে ১০১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। ছয় আর চারের বন্যায় ম্যাচ কার্যত একপেশে করে দেন। তাঁর নেতৃত্বেই ঝাড়খণ্ড প্রথমবারের মতো সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফি জেতে। ১৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এই রাজ্যের হাতে ট্রফি উঠেছে, আর তার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় নাম ঈশান কিষান।
বিশ্বকাপের দলে প্রত্যাবর্তন
এই পারফরম্যান্সের ফল যে জাতীয় দলে ফেরার টিকিট এনে দেবে, সেটা অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন। তবে এত দ্রুত সুযোগ আসবে, সেটা হয়তো ঈশান নিজেও ভাবেননি। ২০২৩ সালের পর আবার ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন তিনি। সঞ্জু স্যামসনের পর দ্বিতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সূর্যকুমার যাদব অধিনায়ক। ফর্ম ও ফিটনেসের কারণে সহ-অধিনায়কের পদ হারিয়েছেন শুভমন গিল, আর সেই দায়িত্বে ফিরেছেন অক্ষর প্যাটেল। এই পরিবর্তনের মাঝেই ঈশান কিষানের অন্তর্ভুক্তি দেখিয়ে দিচ্ছে, নির্বাচকরা সাম্প্রতিক ফর্মকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সুখবরের পরেই নতুন দায়িত্ব
বিশ্বকাপের দলে নির্বাচিত হওয়ার সুখবরের রেশ কাটতে না কাটতেই ঈশান কিষান পেলেন আরেক বড় দায়িত্ব। আসন্ন বিজয় হাজারে ট্রফি ২০২৫-২৬ মরসুমে ঝাড়খণ্ড দলের অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁকে। ঝাড়খণ্ড রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, সাম্প্রতিক সাফল্যের পর রাজ্য দলের নেতৃত্বের ভার ঈশানের কাঁধেই রাখতে চায় তারা।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঝাড়খণ্ড স্কোয়াডে রয়েছেন কুমার কুশাগরা, অনুকূল রয়, রবিন মিঞ্জ, অভিনব শরণ এবং বিরাট সিংয়ের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা। তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশ্রণে তৈরি এই দলে ঈশানের নেতৃত্বে কী ফল আসে, সেটাই এখন দেখার।
নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাস
সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফিতে অধিনায়ক হিসেবে ঈশান কিষান যে পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সকলের চোখে পড়েছে। শুধু বড় ইনিংস খেলা নয়, মাঠের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া, বোলারদের ব্যবহার, তরুণদের পাশে দাঁড়ানো—সব দিকেই তিনি সাবলীল ছিলেন। সেই কারণেই বিজয় হাজারে ট্রফিতেও তাঁকেই নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঈশান বলেছিলেন, ভারতীয় দলে ফিরে তিনি খুব খুশি। একই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডকে তাদের প্রথম সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফি জেতাতে পেরে তাঁর আনন্দ দ্বিগুণ। তাঁর কথায়, দলের সবাই খুব ভালো খেলেছে, আর এই সাফল্য পুরো রাজ্যের ক্রিকেটের জন্য গর্বের।
ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় মঞ্চে
ঈশান কিষানের এই যাত্রা আবারও প্রমাণ করল, ঘরোয়া ক্রিকেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি। বরং ঘরোয়া মঞ্চেই নিজের ব্যাটিং নতুন করে সাজিয়েছেন। ফলাফলও এসেছে হাতেনাতে। নির্বাচকদের চোখে ফের নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি।
এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব সামলাতে হবে, অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে পারফরম্যান্সের চাপ। তবে বর্তমান ফর্ম দেখে বলা যায়, এই চাপ সামলানোর মতো মানসিকতা এখন তাঁর রয়েছে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে ঈশানের জন্য
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬ এখনও কিছুটা দূরে। তার আগে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঈশান কিষান কী করেন, সেটার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ক্রিকেট মহল। একদিনের ফরম্যাটে তাঁর ধারাবাহিকতা কতটা থাকে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একটাই বার্তা দিচ্ছে—ঈশান কিষান আবার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
FAQ
প্রশ্ন: ঈশান কিষান কীভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ফিরলেন?
উত্তর: সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি দলে ফেরার সুযোগ পান।
প্রশ্ন: বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঈশান কিষানের ভূমিকা কী?
উত্তর: তিনি ঝাড়খণ্ড দলের অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন।
প্রশ্ন: সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফিতে ঈশানের সবচেয়ে বড় সাফল্য কী?
উত্তর: টুর্নামেন্টে সর্বাধিক রান করা এবং ঝাড়খণ্ডকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন করা।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঈশানের ভূমিকা কী হতে পারে?
উত্তর: তিনি দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হবেন।
Disclaimer
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ্য তথ্য ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে লেখা। দল নির্বাচন, খেলোয়াড়ের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। পাঠকদের অনুরোধ, চূড়ান্ত আপডেটের জন্য বিসিসিআই ও নির্ভরযোগ্য ক্রীড়া সূত্র অনুসরণ করুন।
| ⚽ ক্রীড়া বিভাগ | 🔗 লিংক |
|---|---|
| 🏏 ক্রিকেট নিউজ | Cricket News |
| 🔥 আইপিএল ২০২৫ | IPL 2025 |
| 📸 ক্রিকেট ভাইরাল | Cricket Viral |
| 🗣️ ক্রিকেট গসিপ | Cricket Gossip |
| 🏆 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ | Champions Trophy 2025 |
| ⚽ ফুটবল নিউজ | Football News |
| 🎯 অন্যান্য খেলাধুলা | Other Sports |
