Mohammad Nabi: এশিয়া কাপ ২০২৫-এর লীগ ম্যাচে বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি আফগান দলের জন্য। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। একসময় স্কোরবোর্ডে মাত্র ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। দর্শকদের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, এখান থেকে আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব নয়। কিন্তু তখনই ব্যাট হাতে রূপকথা লিখতে শুরু করেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মহম্মদ নবী (Mohammad Nabi)।
বিপর্যয় থেকে ম্যাচে ফেরালেন নবী
যে পরিস্থিতিতে তিনি ব্যাট হাতে নামলেন, সেটি ছিল আফগানিস্তানের জন্য কার্যত মরণবাঁচন। প্রতিপক্ষ বোলাররা দাপট দেখাচ্ছিলেন, রান উঠছিল ধীরে। কিন্তু নবীর ব্যাটে সেই চাপ মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। একের পর এক আক্রমণাত্মক শটে তিনি শুধু দলের রান বাড়ালেন না, ম্যাচকেও জমিয়ে দিলেন। তাঁর ইনিংস আফগান ড্রেসিংরুমে এক অন্য রকম আত্মবিশ্বাস এনে দেয়।
মোহাম্মদ নবী ২২ বলে খেলেন ঝোড়ো ৬০ রানের ইনিংস। এই ইনিংসে ছিল তিনটি চার এবং ছয়টি বিশাল ছক্কা। তবে তাঁর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত আসে ইনিংসের শেষ ওভারে।
শেষ ওভারের ঝড় – পাঁচ বলেই পাঁচ ছক্কা
শ্রীলঙ্কান স্পিনার দুনিথ ওয়েল্লাগেকে সামনে পেয়ে শুরু করেন নবীর ঝড়। ওভারের প্রথম পাঁচটি বলেই তুলে নেন পাঁচটি টানা ছক্কা। দর্শকরা মুহূর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকেন। সবাই তখন একটাই প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন – তবে কি যুবরাজ সিং, কাইরন পোলার্ড ও দীপেন্দ্র আইরার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন মহম্মদ নবী (Mohammad Nabi)?
কিন্তু ভাগ্য হয়তো সেদিন একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। শেষ বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। যদিও ওভারে মোট ৩২ রান তুলে দলকে অনেকটা এগিয়ে দেন নবী।
হাতছাড়া হলো বিশ্ব রেকর্ড
যুবরাজ সিং এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরে ক্রিকেট দুনিয়ায় ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে পোলার্ড ও দীপেন্দ্র আইরাও সেই কৃতিত্বের সঙ্গী হয়েছেন। নবীর সামনে সুযোগ ছিল তাঁদের কাতারে নাম লেখানোর। কিন্তু এক বলের জন্য তিনি ইতিহাস গড়তে পারলেন না। তবুও তাঁর ইনিংস আফগান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে মনে রাখা হবে।
দলের ভরসা হয়ে উঠলেন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়
আফগানিস্তানের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন মহম্মদ নবী (Mohammad Nabi)। ব্যাট হাতে যেমন দায়িত্ব নিয়ে খেলেন, বল হাতেও তিনি সমান কার্যকর। এই ম্যাচে তাঁর ইনিংস আবারও প্রমাণ করল, অভিজ্ঞতা মাঠে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ খেলোয়াড়রা যেখানে চাপে ভেঙে পড়ছিল, সেখানে নবী ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রান তুললেন।
এশিয়া কাপের এই ম্যাচটি আফগানিস্তানের কাছে ছিল সুপার ফোরে ওঠার লড়াই। তাই প্রতিটি রান ছিল অমূল্য। নবীর ইনিংসই তাঁদের লড়াইয়ে টিকে থাকতে সাহায্য করল। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফলাফল কী হবে, তা তখনও নির্ধারিত হয়নি, তবে আফগান শিবিরে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছিলেন নবী।
মোহাম্মদ নবীর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নবী শুধু আফগানিস্তানের নয়, বিশ্বেরও এক পরিচিত নাম। দেশের হয়ে তিনি ইতিমধ্যেই খেলেছেন ১৩৮টিরও বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। গড়ে ২২.৪৫ রান এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৫৬—এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে তাঁর ধারাবাহিকতা। শুধু ব্যাট নয়, বল হাতেও তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি নিয়েছেন ১০২টি আন্তর্জাতিক উইকেট।
তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সই আফগান ক্রিকেটকে বারবার এগিয়ে দিয়েছে। আফগানিস্তান যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন ছিল, তখন থেকেই নবী ছিলেন দলের মূল ভরসা। অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব এবং পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে তিনি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য নাম হয়ে থাকবেন।
সমর্থকদের চোখে নবীর ইনিংস
আফগান সমর্থকদের কাছে এই ইনিংস ছিল আবেগের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই নবীর প্রশংসায় ভরে যায় টুইটার এবং ফেসবুক। অনেকেই লিখেছেন, “মহম্মদ নবী (Mohammad Nabi) শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি আফগানিস্তানের আশা।” আবার কেউ কেউ বলেছেন, “যুবরাজ সিং-এর রেকর্ড ভাঙা না গেলেও নবী আমাদের গর্ব।”
এমনকি নিরপেক্ষ সমর্থকরাও তাঁর ব্যাটিং উপভোগ করেছেন। ক্রিকেটের সৌন্দর্যই এখানেই—যে দেশেরই খেলোয়াড় হোন না কেন, তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স সবার মন জয় করে নেয়।
সামনে কী অপেক্ষা করছে নবীর জন্য
মোহাম্মদ নবী এখনো ফিট এবং খেলার মধ্যে আছেন। তাঁর ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই দক্ষতা আফগানিস্তানকে আরো অনেক ম্যাচে সাহায্য করবে। এশিয়া কাপে তাঁর এই পারফরম্যান্স তরুণ খেলোয়াড়দের জন্যও এক বড় শিক্ষা। কীভাবে চাপের মধ্যে খেলতে হয়, কীভাবে দলকে একা হাতে টেনে তুলতে হয়—তা নবীর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই।
ভবিষ্যতে হয়তো তিনি আরেকটি সুযোগ পাবেন ছয় ছক্কার সেই রেকর্ড গড়ার। তবে বৃহস্পতিবারের ইনিংস প্রমাণ করেছে, বয়স বা সময় কোনো বাধা নয়। দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা থাকলে ক্রিকেটে সবসময় কিছু না কিছু নতুন লিখে দেওয়া যায়।
Disclaimer
এই লেখাটি সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী। এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব, এটি কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট বোর্ড, খেলোয়াড় বা সংস্থার সরকারি বক্তব্য নয়।
অবশ্যই দেখবেন: ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে থাকবে চমক! হাত মেলানো নিয়ে ICC-র কড়া পদক্ষেপ
⚽ ক্রীড়া বিভাগ | 🔗 লিংক |
---|---|
🏏 ক্রিকেট নিউজ | Cricket News |
🔥 আইপিএল ২০২৫ | IPL 2025 |
📸 ক্রিকেট ভাইরাল | Cricket Viral |
🗣️ ক্রিকেট গসিপ | Cricket Gossip |
🏆 চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ | Champions Trophy 2025 |
⚽ ফুটবল নিউজ | Football News |
🎯 অন্যান্য খেলাধুলা | Other Sports |