৬,৬,৬,৬,৬! শেষ ওভারে রিঙ্কুর পাঁচ ছক্কায় অবিশ্বাস্য জয় নাইটদের, রশিদের হ্যাটট্রিকেও জয় অধরা গুজরাটের

গুজরাট টাইটান্স: ২০৪/৪ কেকেআর: ২০৭/৭

অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়! শেষ ওভারে ২৯ রান দরকার ছিল নাইটদের জয়ের জন্য। গুজরাটের পাল্টা হানায় গোটা কেকেআরের মিডল অর্ডার – ভেঙ্কটেশ আইয়ার, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন গুটিয়ে গিয়েছে। তখন রিঙ্কু সবে ক্রিজে নেমেছেন।উমেশ যাদব পার্টনার। জেতা সম্ভব এই ম্যাচ?

সম্ভব নয় বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করলে। আইপিএল তো বটেই উত্তরপ্রদেশের রিঙ্কু টি২০ ক্রিকেটের সেরা ম্যাচের ব্র্যাকেটে ফেলে দিলেন। ইয়াশ দয়ালের শেষ ওভারে রিঙ্কু সিং টানা পাঁচটা অবিশ্বাস্য ছক্কা হাঁকিয়ে কেকেআরকে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন। গুজরাটের ২৫০ রান চেঞ্জ করতে নেমে শেষ বলে রিঙ্কুর হিরোগিরিতে কেকেআর জয় হাসিল করল। পাঁচটি ছক্কার থ্রিলারে। তিনটি উইকেট ছিল হাতে। যখনই টি-টোয়েন্টির ইতিহাস আলোচনায় আসবে তখন স্বমহিমায় রিঙ্কুর ২১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস ও হাজির থাকবে। কার্যত কেকেআরের ম্যাচ জেতার কথাই নয়। একবার নাইটের দিকে পেন্ডুলামের মত ম্যাচ দুলাল। তারপর গুজরাটের দিকে।

এমনই হয় ক্যাপ্টেন। যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। কেকেআর ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়ার পরিবর্তে রশিদ খান নেতৃত্ব দিতে নেমেছিলেন। আর তিনি বল হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিক করে সুবিধা জনক পজিশন থেকে কেকেআরকে বেলাইন করে দিয়েছিলেন। ১৭ তম ওভারের প্রথম দিন বলে আফগান সুপারস্টার নাইটদের ধাক্কা দিয়ে যান। তিনি পরপর তুলে নিয়েছিলেন ক্রিজে সদ্য নামা রাসেল, সুনীল নারিন এবং আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে তান্ডব চালানো শার্দূল ঠাকুরকে। ২ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান করার পরে আচমকা ৭ উইকেটে ১৫৫ রান হয়ে যাওয়ার পরে এই ম্যাচটি নাইটদের জেতার কথা নয়। কিন্তু তারপরে রিঙ্কু একাই একদম শেষ বেলায় রোমাঞ্চকর স্ক্রিপ্টে জিতিয়ে দিলেন নাইটদের।

কেকেআরের হাতের মুঠোয় ম্যাচটি ছিল রান চেঞ্জ করার সময়। ২০৫ রান তারা করতে নেমে প্রথম চার ওভারের মধ্যেই রহমনুল্লাহ গুরবাজ এবং জগদীশনকে হারিয়ে কেকেআর বিপদে পড়ে গিয়েছিল। তারপর এক মরশুম আগের ভয়ংকর ফর্মে আবির্ভূত হন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। তান্ডব চালিয়ে চড়াও হয়েছিলেন ইয়াশ দয়াল, জশুয়া লিটলদের উপর। মধ্যপ্রদেশের তারকা অলরাউন্ডারকে থামানো যাচ্ছিল না। নীতিশ রানার সাথে ১০০ রানের পার্টনারশিপে একাই গুজরাটকে কার্যত কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন। ৮ টি বাউন্ডারি ও পাঁচ ওভার বাউন্ডারিতে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন গুজরাটের। ২৯ বলে ৪৫ রান করে নীতিশ রানাও যোগ্য সঙ্গত করছিলেন।

রানরেট এবং আস্কিং রেট নাইটদের একদম আয়ত্তের মধ্যেই ছিল। তবে মোক্ষম সময়ে আলজারি জোসেফ দুর্ধর্ষ ব্রেক থ্রু দিয়ে যান। প্রথমে নীতিশ রানাকে নিজের পরপর দুই ওভারে ফেরান। তারপরে বারুদে ব্যাটিং করতে থাকা ভেঙ্কটেশ আইআরকে ফিরিয়ে দেন। এরপরেই রশিদ খানের হ্যাটট্রিক ও আচমকা নাইটদের ধসে পড়া। রশিদ খান নন, ক্যারিবীয় পেসারই ম্যাচের রং বদলে দিয়েছিলেন।

৭ উইকেটে ১৫৫ রান হয়ে যাওয়ার পর রিঙ্কু নাইটদের হয়ে কতদূর টানতে পারেন, সেটাই দেখার ছিল। ১৮ তম ওভার শেষে ১১ বলে মাত্র সাত রানে রিঙ্কু ব্যাট করেছিলেন। ঠিকমতো টাইমিং করতে পারছিলেন না। ১৯ তম ওভারে জোড়া ওয়াইট দিয়ে জশুয়া লিটল ওভার শুরু করেন। সেই ওভারের শেষ দুই বলে রিঙ্কু বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৭৬-এ পৌঁছে দেন নাইটদের। সাময়িক উত্তেজনার সঞ্চার করলেও তিনি যে শেষমেশ ব্যাট হাতে এভাবে তাণ্ডব চালিয়ে ম্যাচ বের করবেন, তা ভাবা যায়নি।

তার আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিজয় শঙ্কর কেকেআরকে ধুয়ে দিয়েছিলেন। গুজরাট টাইটান্স শেষ দুই ওভারে তাণ্ডব চালিয়ে ২০৪ রান তোলে। শেষ দুই ওভারে ৪৫ রান সংগ্রহ করে। ২৪ বলে ৬৩ রান করেন বিজয় শঙ্কর। চারটি বাউন্ডারি এবং পাঁচটি ওভার বাউন্ডারি সাহায্যে।

এর মধ্যে শেষ দুই ওভারে সব ছক্কা গুলি এসেছিল।শার্দূল ঠাকুর শেষ ওভারে ছক্কার হ্যাটট্রিক হজম করেন। তার আগের ওভারে বিজয়শঙ্কর জোড়া ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন লকি ফার্গুসনের ওভারে। তার সাথে সাই সুদর্শন সাহায্য করেন গুজরাটের দলীয় স্কোর ২০০ পার করতে। নিজের দুর্ধর্ষ ফর্ম বজায় রেখে তিনি আবারও একবার ফিফটি হাঁকালেন। তার নামের পাশে রয়েছে দুটো হাফ সেঞ্চুরি (৩৮ বলে ৫৩)। ব্যাট হাতে শুভমান গিল (৩১ বলে ৩৯), অভিষেক মনোহরও (৮ বলে ১৪) অবদান রাখেন।

রবিবার কেকেআরের হয়ে আবারো সফলতম বোলার হলেন সুনীল নারিন। চার ওভারের কোটায় ক্যারিবীয় স্পিনার তিনটি উইকেট তুলে নেন মাত্র ৩৩ রান খরচ করে।

রশিদের হ্যাটট্রিক, সুদর্শন-বিজয়শঙ্করের দুরন্ত হাফসেঞ্চুরি, সুনীল নারিনের বোলিং, ভেঙ্কটেশ আইয়ারের আগুনে বিস্ফোরক ইনিংস- ইতিহাসে উঠে যাওয়া ম্যাচে আপাতত সব পিছনের সারিতে। রিঙ্কুর স্বপ্নের ব্যাটের জন্যে।